কেউ যেন একটা চুটকিতেই সবকিছু পালটে দিতে লাগলো, আমাদের আবেগ-অনুভূতির তোয়াক্কা না করেই। আমরা চোখের সামনেই সবকিছু সংকুচিত হতে দেখলাম, শুধু নিজের ছায়াটুকু বড় হতে লাগলো। মাইলের পর মাইল রাস্তার দুপাশে কলমি ফুল হঠাৎ করেই যেন মিলিয়ে গেল, দোকানপাট-ইমারতের নীচে। ভোরের মাছরাঙাটাও কোথায় হারিয়ে গেল, উড়াউড়ি থামিয়ে ছুটি নিলো সন্ধ্যের ফড়িং।
ঢাকঢোল পিঠিয়ে থ্রিজি-ফোরজি আসলো, যা দিলো তার চেয়েই যেন বেশি কেড়ে নিল। জাভা রেখে যেদিন এন্ড্রয়েড ফোন নিলাম কি জানি একটা মিসিং ছিল, অহ! সেই থ্রিলটা। রিয়াল ফুটবল, গ্যাংস্টার সিটি, ইবাড্ডি, মিগ৩৩ এইকয়টা জিনিষই তো ছিলো নাওয়াখাওয়া। ২৩ টাকায় ২০ এম্বি নিয়ে কতদিন যে চলে যেত আমাদের। জীবনের একটা অংশ হয়ে যাওয়া ওয়াপট্রিক’টা এমনি পড়ে আছে, যেন প্রাচীন কোনো গোরস্থানের পুরোনো এক বেওয়ারিশ কবর। নতুন বাংলা গান কিংবা ভূত এফএমের লাস্ট এপিসোড ডাউনলোড দিতে অপেরামিনির এড্রেসবারে এখন আর কেউই ফিউশনবিডি ডটকম লিখেনা।
ফেসবুক! নিয়ম করে সকালসন্ধ্যা গুড মর্নিং-গুড নাইট আর চোখ বুজে ফ্রেন্ড রিকুয়েস্ট পাঠানো… খারাপ ছিলনা সামাজিকতার এই স্টাইলটা। সেই সুন্দর ফেসবুকটাই এত তাড়াতাড়ি বকে গেল নাকি ইন্টেলেকচুয়াল হয়ে উঠলো বুঝিনা।
রবি সার্কেলের নাম শুনলে ভ্রুকুচকে অনেকেই বলবে, “এটা আবার কি রে বাবা"? একটু পরপর নোকিয়ার ফিচার ফোনে জ্বলে ওঠা শাউটগুলো যতটা মনোযোগ দিয়ে পড়তাম পাঠ্যবইয়ের পড়া তার ধারে কাছেওনা।
আচ্ছা হাইস্কুলের সেই বেঞ্চগুলো কি এখনো আছে? কি জানি! হয়তো ভেঙে গেছে কিংবা পুরনো হয়ে গেছে বলে ছুড়ে ফেলে দেওয়া হয়েছে আমাদের চারুকলা। সেইসব অক্ষর, চিহ্ন বা শব্দগুলো, যেগুলো একবার দেখেই মুচকি হেসে বলে দিতে পারতাম, “আরেহ! এটা তোর লেখা নাহ”? একটা বিষয় খেয়াল করলাম, পৃষ্টার পর পৃষ্টা লিখে গেলেও এখন আর কলমের দাগে হাতের তালু ভরে যায়না।
এফএম রেডিওর তখন ভরা যৌবন। শীতের সকালে কানে হেডফোন গুজে টিউশন পড়তে যাওয়া। সেই হেডফোনকে আবার একটা নির্দিষ্ট ডাইমেনশনে ধরে রাখতে গিয়ে প্রায়ই কনুইয়ে ব্যথা উঠে যেত। তাই বলে তো আর আরজে তুষার, আরজে ফারহানা, আরজে সালমানদের মিস করা যাবেনা। আজ মোবাইলের ডিফল্ট এফএম রেডিও এপসটাও ডিজেবল করা। অবশ্য এসবের আগেই রঙ হারিয়েছিল বিটিভি নামক জাদুর বাকসো’টা।
হুট করেই যেন বয়স বাড়তে লাগলো ডি ক্যাপ্রিও-শাহরুখ খানের। বুড়োই হয়ে গেল বেচারারা।
হিসেব করে দেখলাম, এই দশকে একটিও বিশ্বকাপ জিতেনি লাতিন আমেরিকানরা। একযুগ পর প্রায় থেমেই গেল মেসি-রোনালদোর রোমাঞ্চকর দ্বৈরথ। সব হারানোর দশক বলে কথা…।
(সব কেড়ে সব ছিন্ন করে দূরে চলে যাওয়া ‘সময়’ অভিমান ভেঙে একদিন তার বাড়ি ফিরবেই, পরীর দিঘীর পাড়ের সেই গ্রামে কিংবা নিশ্চিন্দিপুরে। যেখানটায় আমরা সবাই অপু আর দুর্গা।)