কৈশোরের প্রেমগুলো কেন জানি একপেশে হয়। আড়চোখে থাকানো, স্কুল ছুটির পর একসাথে হাঁটা, দুজন ক্লাসে থাকলেই যেন এক অন্যরকম ভালোলাগা। বেশিরভাগ সময় যে ভালোলাগা আর ভালোবাসা হয়ে উঠেনা। মাঝে মাঝে দুইএকটা উঁকিঝুঁকি করলেও বেশিদিন ঠিকে না। তবে অল সেইন্টস ম্যাট্রিকুলেশন সেকেন্ডারি স্কুলের এস. জানাকি আর কে. রামাচান্দ্রান'র গল্পটা একটু ভিন্ন, যাকে কিশোর বয়সের আবেগ বলে ছুড়ে ফেলে দেওয়া যায় না। আজকালকার মতো প্রপোজ করে হয়নি তাদের শুরুটা। হৃদয় যেখানে কথা বলে মুখ ফোটে তো ভালবাসি বলার দরকার সেখানে পড়েনা। তারপর থেকেই টিফিন ভাগ করা, কথা বলতে গেলে অজানা এক লজ্জা আর বন্ধুদের ভাবী ভাবী ডাক... হাজার হোক ক্লাসের প্রথম প্রেম বলে কথা!
গল্পটা এখানেই শেষ হয়ে যায়না। ইতিহাস সুখের সমাপ্তি মনে রাখে না, ট্রেজেডি চায়। তাই নিষ্পাপ দুটি হৃদয়ের নিঃস্বার্থ পবিত্র প্রেমেও টান পড়ে, ঠিক যেমন আকাশে উড়তে থাকা ঘুরি একসময় টান দেয় নাটাইয়ে। সুটা কেটে দেওয়া ছাড়া কোনো উপায় তখন আর থাকেনা। এই সুতা কাটা ঘুড়ির মতো হঠাত করেই যেন হারিয়ে যায় সীমাহীন এক ভালোবাসা।
নাহ, গল্পটা এখানেও শেষ হয়ে যায়না। ঈশ্বর বরাবরই রহস্যপ্রিয়, সরলতা তার পছন্দ না! তাই ভাগ্য বারবার তাদের নিয়ে খেলা করেছে, ধুমড়েমুছড়ে দিয়েছে দুজনার স্বপ্ন। তবুও কেউ হয়তো প্রত্যেক ফোটা চোখের জলে প্রত্যেকটা প্রার্থনায় খুঁজে ফিরছিলো কারো নিস্তব্ধতা। যেন জীবনানন্দ'র মতো একজন আরেকজনের পথ চেয়ে বসেছিলো মনে মনে কথা দিয়েছিলো, “একদিন এমন সময়, আবার আসিয়ো তুমি! আসিবার ইচ্ছা যদি হয়- পঁচিশ বছর পরে.....”।
রামাচান্দ্রান একজন ট্রাভেল ফটোগ্রাফার! ২২ বছর পর একবার জন্মস্থানে গিয়ে নিজের ফেলে আসা শৈশবটাকেই যেন ফিরে ফেলেন- পুরোনো বাস স্ট্যান্ড যেখানে বিয়ের পর প্রথম তার বাবা-মা নেমেছিলেন, হাসপাতাল যেখানে তিনি জন্মেছেন, শহরের প্রথম শপিং কম্পলেক্স... সবকিছুর মধ্যে যেন আলাদা হয়ে দাঁড়িয়েছিল মাধ্যমিক স্কুলটা! কতইনা স্মৃতি ছড়িয়ে আছে এখানটায়! কার না ফিরে পেতে ইচ্ছে হয় স্কুলের সেইদিনগুলো, সেইসব বন্ধুদের... একটা সময় ৯৬ ব্যাচের স্টুডেন্টরা মিলে রিইউনিয়নের আয়োজন করে! যেখানে আবার ফিরে আসে ২২ বছর আগে হারিয়ে যাওয়া এক ভালোবাসা!
ভিজয় সেথুপতির অভিনয় নিয়ে কিছু বলার নাই এককথায় অতিমানবীয়, কমার্শিয়াল মুভিগুলোর বাহিরে তৃষার এই লুকটা সত্যিই মোহনীয়। কারেক্টর প্লেয়িং এর দিক থেকে '৯৬' মুভিটা দুজনারই ম্যাগনাম অপাস ধরে নেওয়া যায়। রাম-জানুর টিনেজ প্রেম যে দুটি চরিত্র ফুটিয়ে তুলেছে তা আমাকে বারবার সাইরাত মুভি'র পার্শিয়া আর আর্চি'র কথা মনে করিয়ে দিচ্ছিল।
আপনি হয়তো ৯৬ ব্যাচের কেউনা, রাম-জানুর মতো কোনো গল্প আপনার নেই, তবুও এই আপনি কি করে যে এই গল্পের ভিতরে ঢুকে যাবেন বুঝতেই পারবেননা। স্কুল দিনের স্মৃতি - ভালোবাসা - হারিয়ে ফেলা ভালোবাসা - আবার ফিরে পাওয়া অথবা আবার হারিয়ে ফেলা... ৯৬ - এমনই একটা গল্প! যা আপনাকে কখনো হাঁসাবে, কখনো কাঁদাবে আবার কখনো নস্টালজিক করে তুলবে।
এতো সুন্দর সিনেমাটোগ্রাফি! হৃদয় ছোঁয়া সব গান, তার উপর খালি গলায় ভিন্টেজ গান। ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিক শুনে হাহাকার করে উঠবে যে কারোও হৃদয়, কিছু জায়গায় ডিরেক্টর ডায়ালগের জায়গায় শুধু এই ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিক দিয়েই বর্ণনা করে গেছেন দৃশ্যটা। সত্যিই তো ডায়ালগ দিয়ে কি এত গভীরভাবে বুঝানো যেত?
এই মুভিতে কিছু দৃশ্যের এমনভাবে চিত্রায়ন করা হয়েছে যা আপনি অনেক দিন মনে রাখবেন অথবা কখনওই ভুলে যাবেননা।
0 মন্তব্যসমূহ