পথের পাঁচালী: আমার পড়া সবচেয়ে মায়াবী, স্বার্থক বাংলা উপন্যাস।

ইছামতী তীরের অজ-পাড়াগাঁয়ের চাপা-স্বভাবের এক মাষ্টার মশাই আজ থেকে প্রায় নয় দশক আগে তৎকালীন পল্লীজীবনের যে চিত্র ফুটিয়ে তুলেছিলেন তার আবেদন আজও ফুরায়নি। হয়তো কোনোদিনই ফুরাবে না। কারন বিভূতিভুষণ বন্দ্যোপাধ্যায় তার অমর সৃষ্টি 'পথের পাঁচালী'তে বাংলার একটা সাধারণ নিশ্চিন্দিপুর গ্রামকে যে রহস্যময় কাব্যমাহাত্ম দান করে সৌন্দর্যের মায়াপুরীতে পরিণত করেছেন সেই মোহ ত্যাগ কোনো দিনই কোনো পাঠকের পক্ষে সম্ভব হবেনা। পথের পাঁচালী এমনই মায়া জড়ানো ঘোর লাগা এক উপন্যাস।

পথের পাঁচালী উপন্যাস চলচ্চিত্র

কৈশোরে প্রচুর বই পড়া সুকান্ত ভট্টাচার্য পথের পাঁচালী পড়ে এতটাই মুগ্ধ হয়েছিলেন যে, সেই বয়সেই তাঁর মন্তব্য ছিল, ধর্মগ্রন্থের সঙ্গে সমান আদরে এই বইটি বাংলার ঘরে ঘরে রাখা উচিত

প্রখ্যাত ভাষাবিদ হুমায়ুন আজাদের ভাষায়, বিভূতিভূষণ পথের পাঁচালীতে একবার ও চিরকালের জন্যে একটি কাজ করে গেছেন। তিনি পল্লীর অমল সরল কল্পনামার্জিত রোম্যান্টিক কোনো বালককে নিয়ে উপন্যাস লেখার সমস্ত পথ বন্ধ করে গেছেন। অপু একবারই সৃষ্টি হতে পারে তাকে আমরা ফিরে ফিরে পেতে পারিনা। 

যখন তাহার দিদির মাথার সামনে রুক্ষ চুলের এক গোছা খাড়া হইয়া বাতাসে উড়ে তখনি কি জানি কেন, দিদির উপর অত্যন্ত মমতা হয়। কেন যেন মনে হয়, দিদির কেহ কোথাও নাই, সে যেন একা কোথা হইতে আসিয়াছে, উহার সাথী কেহ এখানে নাই। কেবলই মনে হয়, কেমন করিয়া সে দিদির সকল দুঃখ ঘোচাইয়া দিবে সকল অভাব পূরণ করিয়া তুলিবে তাহার দিদিকে সে এতটুকু কষ্টে পড়িতে দিবে না।

পথের পাঁচালীর এই লাইনগুলো কাউকে কাদানোর জন্যে যথেষ্ঠ।


আমার পড়া সবচেয়ে মায়াবী, স্বার্থক বাংলা উপন্যাস।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ